আহলে হাদিস পরিচয় দেওয়া জায়েয নয়।It is not permissible to introduce oneself as Ahl al-Hadith.

 

ইসলামে 'আহলে হাদীস' বা 'সালাফী' মুসলিম কিংবা 'শিয়া', 'সুন্নি', 'বেরলবী', 'দেওবন্দী' ইত্যাদি নামে কোনো পৃথক মুসলমানের ধারণা নেই। ইসলামে কেবল "মুসলমান" হিসেবে পরিচিত হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর মূল কারণ হলো, ইসলামে ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব।

কুরআনে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে:

 "আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।" (সূরা আলে ইমরান ৩:৫২)

   এই আয়াত নির্দেশ করে যে মুসলমানরা যেন নিজেদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে 'মুসলিম' শব্দটিকেই ব্যবহার করে এবং এর আগে-পিছে অন্য কোনো উপাধি জুড়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে।

 "আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।" (সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)

   এই আয়াত দল-উপদলে বিভক্ত হতে নিষেধ করে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দেয়।

বর্ণিত আয়াতসমূহ প্রমাণ করে যে, নিজেদেরকে শুধু 'মুসলমান' পরিচয় দেওয়া কুরআনের নির্দেশ। 'আহলে হাদীস', 'দেওবন্দী' বা অন্য কোনো দলের নাম উল্লেখ করে নিজেদেরকে পৃথকভাবে পরিচয় দেওয়া ঐক্যের পরিপন্থী এবং দলাদলির জন্ম দেয়। নির্দিষ্ট দলের নামে পরিচয় দেওয়া মানে নিজেকে সেই দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা, যা ইসলামের মূল শিক্ষার পরিপন্থী।

পর্যবেক্ষণ করা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মাযহাবীরা সাধারণত নিজেদেরকে 'হানাফী মুসলিম' বা 'শাফী মুসলিম' হিসেবে নয়, বরং 'মুসলিম' হিসেবেই পরিচয় দেন। এর বিপরীতে, কিছু গোষ্ঠী তাদের দলীয় পরিচিতিকেই প্রাধান্য দেয়, যা দলাদলির প্রবণতাকে প্রকাশ করে।

বিভিন্ন দলের মধ্যে কিছু বাড়াবাড়ি, দলাদলি বা বিভেদ দেখা যায়। তবে কোনো কোনো দলীয় গোষ্ঠীর মধ্যে এই বাড়াবাড়ি এতটাই প্রকট যে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাদের মধ্যে দলাদলির কারণে মসজিদ এবং কবরস্থানের মতো স্থানও পৃথক করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের পদক্ষেপ ইসলামে নিষিদ্ধ দলাদলির চরম নিদর্শন।

ইসলামের মূল আদর্শ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা, যেমন আল্লাহ বলেছেন:

 "আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি।" (সূরা বাকারা ২:১৪৩)

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ হলো মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া।

পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বারবার মুসলিম হিসেবে পরিচয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:

 "তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মের উপর (তোমরা দৃঢ় থাক)। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’।" (সূরা হজ্জ ২২:৭৮)

   এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে আল্লাহ নিজেই উম্মতের নাম 'মুসলিম' রেখেছেন।

  নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, “সুতরাং হে আল্লাহ্ বান্দারা! আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের নাম দিয়েছে (মুসলিম) সেই আল্লাহর ডাকেই তোমরা নিজেদের ডাকবে মুসলিম মু’মিন।” (মুসনাদে আহমদ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ)

   এই হাদীসটি আল্লাহর দেওয়া নাম 'মুসলিম' ব্যবহার করে পরিচয় দেওয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

 "আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’?" (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৩)

   'মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত' বলা তখনই সঠিক, যখন জাতির পরিচয় 'মুসলিম' হয়।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ্‌ এবং রাসূল (সাঃ) মুসলিম পরিচয়কে অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন:

  সূরা নাহল ১৬:১০২, সূরা আলে ইমরান ৩:১০২, সূরা যুমার ৩৯:১২, সূরা আলে ইমরান ৩:৬৭, সূরা বাকারা ২:১৩২, সূরা ইউসুফ ১২:১০১, সূরা নমল ২৭:৩০-৩১, সূরা মায়েদা ৫:১১১, সূরা বাকারা ২:১২৮, সূরা আনআম ৬:১৬২-১৬৩, সূরা জুখরুফ ৪৩: ৬৮-৭০। এই সকল আয়াতে আল্লাহ্ 'মুসলিম' পরিচয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুসলিমদের প্রশংসা করেছেন।

হাদীসেও মুসলিমের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে:

 "যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম।" (তিরমিজি: ২৬২৭)

ইসলামের মূল বিষয় হলো 'ইসলাম':

১. কুরআন নাযিল এবং রাসূল প্রেরণ: কুরআন ও রাসূল (সাঃ)-কে ইসলামের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, কোনো বিশেষ দলের জন্য নয়।

 "তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন।" (সূরা সফ ৬১:৯)

আরো পড়ুন... একশত আকিদা শিখুন

২. মুসলিম হওয়ার আদেশ: মুসলিম হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো দলীয় উপাধি গ্রহণের নয়।

 "যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে বল, ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ’?" (সূরা আলে ইমরান ৩:২০)


৩. ইসলামের উপর থাকার নির্দেশ:

* "আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না।" (সূরা আলে ইমরান ৩:৮৫)

৪. ইসলামকে পূর্ণরূপে মেনে নেওয়ার নির্দেশ:

 "হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর..." (সূরা বাকারা ২:২০৮)

৫. মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ:

 "...সুতরাং তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেয়ো না।" (সূরা বাকারা ২:১৩২)

৬. ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ:

 "...তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।" (সূরা আলে ইমরান ৩:৬৪)

৭. আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামের স্বীকৃতি:

*"নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম।" (সূরা আলে ইমরান ৩:১৯)

"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম। এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম। এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।" (সূরা মায়েদা ৫:৩)

এই সকল প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো বক্তা বা গোষ্ঠী কর্তৃক 'মুসলিম' পরিচয়ের পরিবর্তে অন্য কোনো দলীয় পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যে আহ্বান, তা আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশের পরিপন্থী বলে মনে হয়। এটি মুসলিম সমাজের ঐক্য নষ্ট করে ফিতনা সৃষ্টি করার কারণ হতে পারে।

আল্লাহ সকল মুসলিমকে

 সঠিক বোধ ও উপলব্ধির শক্তি দান করুন। আমিন।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আবু তোহা আদনানসহ আরো যে ৭ জন বিখ্যাত আলেম নারীর প্রেমে পড়েছিলেন

অনলাইন ইসলামিক প্রতিযোগিতা ২০২৫ |

মসজিদ কমিটির সভাপতি হবেন ডিসি ও ইউএনও: ধর্ম উপদেষ্টা

থালাবাটির বেদনা – গাজার পথে পথে হাহাকার আর নীরব মানবতা

ঢাকার উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত

জাতীয় সমাবেশে ৭ দফার দাবির বার্তা পৌঁছাতে চায় জামাত

এআইয়ের বাপ চলে আসলো — গুগলের NotebookLM-এর বিস্ময়কর ক্ষমতা

পরীক্ষার ফি বণ্টনের ন্যায়সংগত পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত?

দখলদারদের বর্বর অভিযান: বাড়িঘর ধ্বংস, ১২ নিরীহ ফিলিস্তিনি গ্রেফতার

AI প্রযুক্তির অন্ধকার দিক: ১৫টি ভয়াবহ ক্ষতি যা আপনার জানা দরকার